কুকুরের কামড়ে জলাতংক হয়— তথ্যটি প্রায় সবারই জানা। বিড়াল, শেয়াল, বেজি, বানরের কামড় কিংবা আঁচড় থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে।
এসব পশু কামড়ালেই যে জলাতংক হয় তা নয়। তবে টিকা অবশ্যই নিতে হবে।জলাতংক হয়ে গেলে সাধারণত কিছুই করার থাকে না। তবে পশুর কামড়ে দ্রুত ভ্যাকসিন দিলে জলাতংকের ঝুঁকি কমে। জলাতংক হলে মৃত্যু ১০০ ভাগ নিশ্চিত।জলাতংক ছড়াতে পারে এ রকম পশু কামড়ালে ‘জিরো আওয়ার’ মানে যত দ্রুত সম্ভব টিকা দিতে হবে। যত দ্রুত টিকা দেওয়া হবে ততই ঝুঁকিমুক্ত থাকা যাবে। দেখা গেছে অসচেতনতাই জলাতংক ছড়ানোর জন্য অনেকাংশে দায়ী।অনেকে মনে করেন, কুকুর কামড় দিলে দু-একদিন পরে টিকা নিলেই হয়। এটা মোটেই ঠিক নয়। প্রত্যেক জেলায় সদর হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে জলাতংকের টিকা দেওয়া হয়।
কুকুর কামড়ালে
কুকুর কামড়ানোর জায়গায় প্রথমেই কাপড়কাচার সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ক্ষার যুক্ত সাবান দিয়ে প্রবহমান পানিতে ফেনা ফেনা করে কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধুয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
কামড় যদি গভীর হয় বা যদি রক্ত বের হয় তবে, ক্ষতস্থানের পাশে রেইবিজ ইমিউন গ্লবিউলিন বা আরআইজি ভ্যাকসিন দিতে হয়। পাশাপাশি অ্যান্টি রেইবিজ ভ্যাকসিনও দিতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত বুকের উপর কামড় বা আঁচড়ের দাগ দেখা যায়। কারণ তাদের উচ্চতা আর কুকুরের উচ্চতা কাছাকাছি। তবে, ঘাড়ের কাছে কামড় কিংবা আঁচড় লাগলে যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন দিতে হবে।
কুকুর কিংবা বিড়াল কামড়ালে অনেকে বাটিপড়া, চিনিপড়া, মিছরিপড়া ইত্যাদি করে থাকেন।
ডা. নাহিদ এ সম্পর্কে বলেন, “ঝাড়ফুঁক ধরনের চিকিৎসা কোনো রোগের হাত থেকে বাঁচাতে পারে না। তাই ঝুঁকি না নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত।”
অ্যান্টি রেইবিজ ভ্যাকসিন দেওয়ার সময়সূচি
প্রথম দিন ভ্যাকসিন দেওয়ার পর তৃতীয় দিন, দ্বিতীয় ভ্যাকসিন দিতে হবে। এরপর যথাক্রমে ৭ম, ১৪তম ও ২৮তম দিনে মোট ৫টি ভ্যাকসিন দিতে হয়।
সাধারণত সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হয়। অ্যান্টি রেইবিজ ভ্যাকসিন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়। সরবরাহজনিত ঘাটতির ফলে কখনও ভ্যাকসিন দিতে দেরি হলে মহাখালী সরকারি সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে রোগীদের যোগাযোগ করতে দেখা গেছে।
এই হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা বিভাগ চালু আছে।
জলাতংকে আক্রান্ত মানুষের লক্ষণ
* পানির পিপাসা খুব বেড়ে যায়। রোগী পানি দেখলেই আতংকিত হয়, ভয় পায়।
* আলো-বাতাসের সংস্পর্শে এলে আতংক বেড়ে যায়।
* খাবার খেতে খুবই কষ্ট হয়, খেতে পারে না।
* মুখ থেকে লালা ঝরে।
* মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
* আক্রমণাত্বক আচরণ দেখা যায়।
মানুষসহ সকল গবাদিপশুর জন্য জলাতংক ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক রোগ। আক্রান্ত পশুর কামড়ে সুস্থ পশু বা মানুষের মধ্যে এ জীবাণু সংক্রামিত হয়। লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে মৃত্যুই এ রোগের নিশ্চিত পরিণতি।
পরিবারের কারও জলাতংক হলে
তার চিকিৎসার সময় সেবাযত্নকারীকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে আক্রান্ত রোগীর প্লেটের অবশিষ্ট খাবার খাওয়া যাবে না। রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র সাবধানতার সঙ্গে ধুতে হবে। তবে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার, হাতে কাটাছেঁড়া থাকলে রোগীর চিকিৎসায় সেবাদানকারীকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কারণ কাটা অংশ দিয়ে শরীরে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জলাতংক আক্রান্ত পশুর লক্ষণ
কান সোজা ও চোখ বড় করে রাখে। মুখ দিয়ে প্রচুর লালা ঝরে। পানির পিপাসা হয়, তবে পান করতে পারে না। ভীষণভাবে অশান্ত হয়ে ওঠে। শক্ত রশি ছাড়া আটকে রাখা যায় না। সামনে যা পায় সেটাই কামড়ানোর চেষ্টা করে। আক্রান্ত পশু নিস্তেজ ও অবশ হয়ে মারা যায়।
করণীয়
জলাতংক হয়ে গেলে আর কোনও চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত পশু মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করতে হবে। গৃহপালিত কুকুরকে নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা প্রদান করতে হবে। চিকিৎসা চলার সময়ে কোনও অবস্থায় ওষুধ খাওয়ানোর জন্য পশুর মুখে হাত দেওয়া যাবে না। এছাড়া আক্রান্ত পশু মারা গেলে কোথাও ফেলে না রেখে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।
প্রতিষেধক
পোষা কুকুর বা বিড়ালকে নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। টিকা দেওয়া হয়নি এমন পশুর কামড়ে মানুষ বা পশু আক্রান্ত হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।এছাড়া প্রত্যেক জেলাতেই পশু হাসপাতাল রয়েছে। পোষা প্রাণীর টিকা এসব হাসপাতালে পাওয়া যাবে।
Leave a Reply