ভালোবাসা, ভালোবাসা, কেবলই ভালোবাসা - বঙ্গ সমাচার ভালোবাসা, ভালোবাসা, কেবলই ভালোবাসা - বঙ্গ সমাচার

মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

জরুরী বিজ্ঞপ্তি :
জেলা ভিত্তিক প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আমাদের পরিবারে যুক্ত হতে আপনার সিভি পাঠিয়ে দিন bongosamacharnews@gmail.com এই ঠিকানায়। বিজ্ঞাপনের জন্য  ইমেইল করুন bongosamacharnews@gmail.com এই ঠিকানায়।

ভালোবাসা, ভালোবাসা, কেবলই ভালোবাসা

একটার দিকে একটা শবযান আর একটা মোটরগাড়ি এসে থামল মিস হিলটনের বাড়ির সামনে। একজন লোক আর একজন ভদ্রমহিলা নামলেন গাড়ি থেকে। দুজনই মধ্যবয়সী, আর কালো পোশাক পরে ছিলেন। লোকটা যখন কফিনের গাড়ির লোকের সঙ্গে নিচু স্বরে কথা বলছিলেন, মহিলা কাঁদছিলেন।
মিস হিলটনের শেষকৃত্য হলো মিগেল স্ট্রিটের সবচেয়ে দ্রুত আর নিরিবিলি শেষকৃত্য। গতবারেরটা ছিল আরেক বুড়ি বিধবা সমাজকর্মী মিস রিকডের, পাড়ার ভালো দিকটাতে থাকতেন। সেবারে উনআশিখানা গাড়ি আর একটা বাইসাইকেল ছিল, গুনেছিলাম আমি।
ওঁরা দুজন বিকেলের দিকে ফিরে গেলেন আর উঠানে বড় একটা আগুন জ্বেলে তোশক, বালিশ, বিছানার চাদর, কম্বল সব পুড়িয়ে ফেলা হলো। দেখলাম ধূসর কাঠের বাড়িটার সব কটি জানালা খোলা, এমন আগে আর কখনো দেখিনি। সপ্তাহের শেষে আমগাছে একটা সাইনবোর্ড লাগানো হলো, ‘বিক্রি হবে’।
পাড়ার কেউ মিস হিলটনকে চিনত না। তিনি যখন বেঁচেছিলেন, তাঁর বাড়ির সামনের ফটকে সব সময় তালা ঝুলত। কেউ কোনো দিন তাঁকে বেরোতে বা কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেখেনি। তাই চাইলেও তাঁর জন্য শোক করা যাচ্ছিল না।
তাঁর বাড়িটার কথা ভাবলেই দুটো রং দেখতে পেতাম শুধু—ধূসর আর সবুজ। আমগাছের সবুজ আর বাড়িটার ধূসর, পাঁচিলের ওপর লোহার যে শিকগুলোর জন্য আম পাড়া যেত না, সেগুলোও ছিল ধূসর।
ক্রিকেট খেলার সময় মিস হিলটনের উঠানে বল পড়লে কখনো ফেরত পাওয়া যেত না। মিস হিলটন যখন মারা গেলেন, সেটা আমের মৌসুম নয়। কিন্তু প্রায় ১০-১২টা ক্রিকেট বল ফিরে পেলাম আমরা।
নতুন লোকজন আসার আগেই আমরা তাঁদের অপছন্দ করার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলাম। বোধ হয় আমরা ছিলাম বেশ চিন্তিত। একজন লোক হামেশাই আমাদের নামে পুলিশের কাছে নালিশ করত, গলিতে আমরা ক্রিকেট খেলি, এই বলে। ক্রিকেট না খেললেও বলত আমরা নাকি বেজায় গোলমাল করি।
একদিন স্কুল থেকে ফিরতেই হ্যাট বলল, ‘এক লোক আর এক মহিলা। মহিলাটা দেখতে সুন্দর, লোকটা জঘন্য। পর্তুগিজ, দেখে মনে হলো।’
আমি বেশি কিছু দেখলাম না। সামনের ফটকটা খোলা ছিল, জানালাগুলো আবার বন্ধ।
একটা কুকুরের রাগী ডাক শুনলাম।
একটা জিনিস দ্রুতই বোঝা গেল। এরা যে-ই হোক, পুলিশকে ফোন করে ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে বলে নালিশ করবে না আমাদের নামে।
সে রাতে অনেক আওয়াজ শোনা গেল ওই বাড়ি থেকে। রেডিও বাজছিল তারস্বরে, মাঝরাতে ত্রিনিদাদ রেডিও বন্ধ হওয়া অবধি। কুকুরটা চেঁচাচ্ছিল, লোকটাও। মহিলার গলা শুনলাম না।
পরদিন সকালে সব শান্ত।
আমি স্কুলে যাওয়ার আগে মহিলাকে দেখলাম। বোয়ি বলল, ‘এই মহিলাকে আগে কোথাও দেখেছি মনে হচ্ছে। মুকুরাপোয় দুধ দিতে যেতাম, সেখানে বোধ হয়।’
ভদ্রমহিলাকে মিলিয়ে স্ট্রিটের অন্যদের সঙ্গে মানাত না। তিনি ছিলেন ভীষণ সুসজ্জিত, একটু বেশিই সুন্দরী আর বেজায় পরিপাটি। তাঁকে অন্য মহিলাদের সঙ্গে মেরির দোকানে চাল আর ময়দার জন্য ঠেলাঠেলি করতে দেখলে হাসিই পেত।
মনে হলো, বোয়ি ঠিকই বলছে। তাঁকে মানাত মুকুরাপোর সুন্দর বাড়িগুলোর একটাতে—শর্টস পরে বাগানে বেড়াতে গেলে, উর্দিপরা চাকরসমেত।
কিছুদিনের মধ্যেই লোকটার দেখা পেলাম। পাতলা, লম্বা, মুখটা বিচ্ছিরি আর গোলাপি ব্রণে ভরা।
বোয়ি বলল, ‘ঈশ্বর, এ তো এক নম্বরের মাতাল।’
আমার একটু সময় লাগল বুঝতে যে লম্বুটা আসলেই ২৪ ঘণ্টা টাল থাকে। ওর গা থেকে বাজে রামের গন্ধ বেরোত আর আমি ওকে ভয়ও পেতাম। দেখলেই চলে যেতাম রাস্তার ওপারে। তার বউ, কিংবা যে-ই হোক, যদিওবা পাড়ার অন্য সবার তুলনায় সে ছিল সুসজ্জিত মহিলা, কিন্তু ওর জামাকাপড় ছিল আমাদের যে কারও চেয়ে খারাপ। এমনকি জর্জের চেয়েও নোংরা।
লোকটা কোনো কাজ করে বলে মনে হতো না।
আমি হ্যাটকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এত সুন্দরী মহিলা কী করে এমন একটা লোকের সঙ্গে মেশে?’
হ্যাট বলল, ‘তুই বুঝবি না বাপ, আমি বললেও তুই বিশ্বাস করবি না।’
তখন কুকুরটাকে দেখলাম।
দেখতে একটা রামছাগলের মতো বড়, আর ষাঁড়ের মতো বজ্জাত। মুখটা সরু, মালিকটার মতোই। দুটোকে একসঙ্গেই দেখা যেত।
হ্যাট বলল, ‘একটা জিনিস খুব আশ্চর্য, বুঝলি। এরা কোনো আসবাব আনেনি। মনে হচ্ছে ওদের ওই একটা রেডিওই আছে।’
এডোস বলল, ‘ওদের কাছে আমি অনেক জিনিস বেচতে পারি।’
আমি ওদের কথা প্রায়ই ভাবতাম, আর মহিলাটার জন্য দুশ্চিন্তা করতাম। তাঁকে বেশ মনে ধরেছিল—তিনি যেভাবে বোঝাতে চাইতেন সবকিছু বেশ ঠিকঠাক আছে। তিনি পাড়ার আর দশজন মহিলার মতোই, বিশেষভাবে লক্ষ করার মতো কিছু নেই তাঁর মধ্যে—এ সবকিছুর জন্যই ভালো লাগত তাঁকে।
তখনই শুরু হতো মার।
মহিলা চেঁচিয়ে দৌড়ে বেরোতেন। আমরা শুনতাম ভয়ানক কুকুরটার ঘেউ ঘেউ আর লোকটার চিৎকার শাপশাপান্ত আর গালিগালাজ।
হ্যাট বড়দের বলল, ‘সবাই মিলে গিয়ে দেখি না কেন কী হলো?’
এডয়ার্ড আর এডোস হাসল।
আমি বললাম, ‘কী হয়েছে হ্যাট?’
হ্যাট হেসে বলল, ‘তুই বড্ড ছোট, ফুলপ্যান্ট পরা পর্যন্ত সবুর কর।’
একদিন ক্রন্দনরত মহিলাকে দেখলাম হঠাৎ করে। মনে হলো লাজলজ্জার মাথা খেয়েছেন। কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় দৌড়াচ্ছেন, আর যাকেই দেখছেন, বলছেন, ‘বাঁচাও, বাঁচাও, ও আমাকে ধরতে পারলে মেরে ফেলবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পূর্বানুমতি ব্যাতিত এই সাইটের কোন লেখা, ছবি বা ভিডিও ব্যাবহার করা নিষিদ্ধ।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com