মিলির এলোমেলো ছবি - বঙ্গ সমাচার মিলির এলোমেলো ছবি - বঙ্গ সমাচার

মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৫২ পূর্বাহ্ন

জরুরী বিজ্ঞপ্তি :
জেলা ভিত্তিক প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আমাদের পরিবারে যুক্ত হতে আপনার সিভি পাঠিয়ে দিন bongosamacharnews@gmail.com এই ঠিকানায়। বিজ্ঞাপনের জন্য  ইমেইল করুন bongosamacharnews@gmail.com এই ঠিকানায়।

মিলির এলোমেলো ছবি

কাগজ, পেনসিল, রং…সবকিছু নিয়ে চুপচাপ বসে আছে মিলি। ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হচ্ছে। বিষয়: স্বাধীনতা। মিলি আশপাশে তাকিয়ে দেখল, কেউ আঁকছে স্মৃতিসৌধ, কেউ আঁকছে বাংলাদেশের পতাকা, কেউ আঁকছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি। মিলি কী আঁকবে?

‘নাহ! মাথায় কিচ্ছু আসছে না। ধুর!’ মনে মনে ভাবল সে। ওর মাথার মধ্যে বোধ হয় শুধু গোবর ভরা, তাও আবার পচে সার হয়ে গেছে। মিলি ক্লাস ফোরে পড়ে। স্কুলের বইয়ে সে পড়েছে, ‘গরুর গোবর উৎকৃষ্ট সার।’ কিন্তু এই মুহূর্তে ওর সার কোনো কাজে আসছে না। ওদিকে দশ-দশটা মিনিট পার হয়ে গেছে।
মিলির ঘাম হচ্ছে, প্রচণ্ড তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ।

‘আরে আরে! মনে হচ্ছে একটা বুদ্ধি উঁকি দিচ্ছে, কিন্তু মাথায় আসছে না।’ মিলি একটু পানি খেয়ে নিল। তাহলে হয়তো বুদ্ধিটা পেট থেকে মাথায় উঠে আসবে।

মিলি এবার কাজ শুরু করে দিল। সত্যি বুদ্ধিটা এসে গেছে। পুরো কাগজে তুলি ঘষে মিলি সবুজ রং করে ফেলল। দেখে মনে হয় একটা সবুজ কাগজ। ‘বাহ! চমৎকার হয়েছে। কোনো কিছু আঁকা ছাড়াই আজ একটা ছবি হবে।’ মনে মনে ভাবল সে।
মিলি চারপাশে তাকাল। নাহ, কেউ ওর ছবিটা দেখছে না। নিশ্চিন্ত মনে কাজ করা যায়। সবুজ চারকোনা বাক্সটার ভেতর গাঢ় লাল বৃত্ত এঁকে, সূর্যের একটা চমৎকার আভা তৈরি করল মিলি। ব্যস, প্রায় হয়ে গেছে।

মিলি তুলিতে কালো রং মাখিয়ে কেবল হাত বাড়িয়েছে, অমনি পাশের মেয়েটার কনুইতে বসল একটা মশা। হাত ঝাড়া দিয়ে সে মশাটা সরিয়ে দিতে গেল, আর মিলির গায়ে লাগল ধাক্কা। ব্যস! এলোমেলো কালো রং ছড়িয়ে গেল লাল সূর্যটার মাঝে।
মিলির কান্না আসছে। এখন কী হবে? সময় আর বেশি নেই। মাত্র বিশ মিনিট।

মিলি নিজের চুল টানল। পাশের মেয়েটা এরই মধ্যে সরি বলে মাফ চেয়ে নিয়েছে। এরপর তো তাকে আর কিছু বলা যায় না। বলে লাভও নেই। যা হওয়ার হয়ে গেছে। মিলির অবশ্য রাগ কমল না। মেয়েটা সরি বলেছে, মশাটা তো বলেনি! দুষ্ট মশা!

রাগ কমাতে কমাতে চলে গেল আরও দশ মিনিট। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। দ্রুত হাতে কালো রংটা তুলি দিয়ে ঘষে মিলি একটা মানুষের অবয়বে পরিণত করল। কী ভেবে কে জানে, নিচে কয়েকটা সাল লিখল সে।
১৯৪৭…১৯৫২…১৯৬৯…১৯৭১…

তারপর হলুদ রং দিয়ে বাংলাদেশের একটা মানচিত্র এঁকে ফেলল। সময় শেষ। তাড়াহুড়া করে ছবি জমা দিল মিলি। জমা দেওয়ার পরপরই মনে পড়ল, ছবির পেছনে নাম লেখা হয়নি! যাহ, এত কষ্ট করে ছবিটা এঁকে কী লাভ হলো?

প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী শুরু হলো। তিনটা গ্রুপে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। মিলি ‘খ’ গ্রুপে পড়েছে। নাম লিখতে ভুলে গেছে, তবু আশা আছে। ‘ক’ গ্রুপের পুরস্কার দেওয়া শেষ। ‘খ’ গ্রুপের তৃতীয় পুরস্কার দেওয়া হলো, দ্বিতীয় পুরস্কার দেওয়া হলো, প্রথম পুরস্কারও দেওয়া হলো। মিলির খোঁজ করল না কেউ।

মিলি বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। বাসায় প্রচুর পড়া জমে আছে। ‘গ’ গ্রুপের নাম ডাকা শেষ। মিলি অনেকটা দূরে চলে এসেছে, মাইকের শব্দ তখনো শোনা যাচ্ছে। ‘এবার রয়েছে সেরা ছবির পুরস্কার। এই যে ছবিটি। এতে কারও নাম দেওয়া নেই। যে এঁকেছ দ্রুত মঞ্চে চলে এসো।’

মিলি কী ভেবে দাঁড়াল। পেছনে তাকাল। দূরে ছবিটা দেখা যাচ্ছে—সবুজের মধ্যে লাল। তাতে কালো রঙে মানুষের অবয়ব, হাতে রাইফেল…

সবাই দেখল, একটা ছোট্ট মেয়ে দৌড়ে চিৎকার করতে করতে মঞ্চে উঠছে। বিচারকেরা ভাবতেই পারেননি, এত ছোট মেয়েটাও এত সুন্দর ছবি আঁকতে পারে!

সংবাদটি শেয়ার করুন


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পূর্বানুমতি ব্যাতিত এই সাইটের কোন লেখা, ছবি বা ভিডিও ব্যাবহার করা নিষিদ্ধ।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com